Wellcome to National Portal
উপজেলা ভূমি অফিস, শাহজাদপুর ওয়েব পোর্টালে আপনাকে স্বাগতম..
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসন! প্রতিবন্ধীদের মুখে হাসি
ছবি
ডাউনলোড

প্রতিবন্ধীদের মুখে হাসি

‘অনেকে অনেক কথা শোনাত। সব মুখ বুজে সহ্য করতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে বাড়ি দেওয়ায় আমাদের জীবনে শান্তি ফিরেছে।’

শারীরিক প্রতিবন্ধী মালেকা খাতুনকে বিয়ে করায় পরিবার থেকে বিতাড়িত হন দিনমজুর মো. রতন। বঞ্চিত হন পরিবারের সম্পত্তি থেকে। ঠাঁই হয় পথের ধারের ঝুপড়িতে। প্রতি পদে মানুষের উপেক্ষা, অবহেলা সইতে হয় মালেকা ও রতনকে।

রতন দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। নিজের বাড়ি করার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি। সম্প্রতি তাঁরা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ীতে বাড়ি পেয়েছেন। এখন যেন তাঁদের সেই কষ্টের বেলা ফুরিয়েছে।


রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জের সাতটি আশ্রয়ণ প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুধু মালেকা ও রতন দম্পতি নন, বহু প্রতিবন্ধীই সরকারের দেওয়া বাড়ি পেয়েছেন। ২ শতাংশ জমিসহ সেমিপাকা ঘরের মালিক হওয়ার পর প্রতিবন্ধীদের জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন আর তাঁদের বোঝা মনে করে অবহেলার চোখে দেখা হচ্ছে না।

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাড়ি পাওয়া মালেকা খাতুনের দুই পা জন্মগতভাবেই অচল। তিনি হাতে ভর দিয়ে হাঁটেন। কিন্তু সব সময় মুখে যেন হাসি লেগেই আছে। গত শুক্রবার নিজের ঘরে বসে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এখান থেকে কিছুটা দূরে কায়েমপুর ইউনিয়নের চিনা ধুকুরিয়া গ্রামে আশ্রিত ছিলাম। আমাকে বিয়ে করায় আমার স্বামীকে আর বাড়িতে তোলেনি তার পরিবার। অনেকে অনেক কথা শোনাত। সব মুখ বুজে সহ্য করতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে বাড়ি দেওয়ায় আমাদের জীবনে শান্তি ফিরেছে। ’

এখন মালেকা খাতুন হাতে সেলাই মেশিন চালান। নতুন একটি এলাকায় বসতি গড়ায় এখনো খুব বেশি পরিচিতি হয়নি তাঁর। অল্প কিছু সেলাইয়ের কাজ পাচ্ছেন। তবে মালেকা খাতুন শিগগিরই অনেক কাজ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে এই এলাকায় এসেছি। এখনো খুব বেশি কাজ পাচ্ছি না। তবে যা পাচ্ছি তা দিয়ে মোটামুটি আয় হচ্ছে। একটু পরিচিতি বাড়লে আয়ও বাড়বে। ’

একই প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রিক্তা (৪০)। তিনি ছোট বোন নাহার পারভীনকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকছেন। আগে তাঁরা মহাসড়কের ধারে ঝুপড়িতে থাকতেন। সেখানে সমস্যার অন্ত ছিল না। নতুন বাড়িতে উঠে বেশ আনন্দেই আছেন তাঁরা। বাড়িতে ওঠার পর টিভিও এসেছে। অবসর সময়ে বিনোদনের ব্যবস্থা হয়েছে।

নাহার পারভীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে ঝুপড়িতে ছিলাম। বৃষ্টিতে মাথার ওপর পানি পড়ত। থাকা যেত না। এখানে এসে অনেক সুবিধা হয়েছে। এখন নিজেদের ঘরে বসে টিভি দেখছি। এটা স্বপ্নের মতো। ’

গত শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদরের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ১৪৩ নম্বর বাড়ির সামনে কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী আলমগীর হোসেনের (৩২) সঙ্গে। স্ত্রী ও এক কন্যা নিয়ে বসবাস করছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতে। এক দশক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর এক পা কেটে ফেলতে হয়, আরেক পা অচল হয়ে যায়। অভাবী পরিবারের সদস্য আলমগীরের ঠাঁই হয় সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের বস্তিতে। এরপর বহু অবহেলা, উপেক্ষায় জীবন পাড়ি দিচ্ছিলেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাড়ি পেয়ে যেন নতুন জীবন পেয়েছেন আলমগীর। নিজের বাড়ির আঙিনায় সবজি লাগিয়েছেন। কয়েকটি ফুলের গাছও দেখা গেল তাঁর ঘরের সামনে।

আপনার বাড়িটি তো সুন্দর—প্রতিবেদকের এমন কথার উত্তরে আলমগীর হোসেন বললেন, ‘আমি নিজেই বাড়িটার আঙিনা সাজিয়েছি। স্ত্রীও আমাকে সহযোগিতা করেছে। লাউগাছটায় অনেক লাউ ধরেছিল। আশপাশের মানুষকে দিয়েছি। ’ আগে কেমন ছিলেন—জানতে চাইলে আলমগীর বললেন, ‘আমরা রাতে ঘুমাতে পারতাম না। তিন হাজার টাকা বাসাভাড়া দিতে হতো। মাস শেষ হলেই বাড়িওয়ালা টাকার জন্য চাপ দিত। সময়মতো টাকা দিতে না পারলে তার হাতে-পায়ে ধরতে হতো। এখন সেই দুশ্চিন্তার দিন আর নেই। ’


(Courtesied by- Upazila Land Office, Shahjadpur, sirajganj.